আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালন : এখানে ছাগলকে সম্পূর্ণ কারাগারে পালন করা হয়। ছাগলের বাড়ির জন্য উন্নত ও শুকনো জায়গা নির্বাচন করতে হবে। এই পদ্ধতিতে কাঠ, বাঁশ, টিন, চান, গোলপাতা ব্যবহার করে কম খরচে একটি বাড়ি তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘর তৈরি করার সময় প্রতিটি বয়স্ক ছাগলের জন্য ১ বর্গমিটার (১০ বর্গফুট) জায়গার প্রয়োজন হবে। মেঝে স্যাঁতসেঁতে হলে ছাগলের ঘরে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। এখানে ছাগলকে সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় প্রয়োজনীয় সবুজ ঘাস, দানাদার খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা হয়। তবে, যদি প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা তাদের বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় তবে তাদের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। নতুন ছাগল দিয়ে খামার শুরু করার সময়, এটি প্রথমে সম্পূর্ণ বন্ধ অবস্থায় রাখা যায় না। ধীরে ধীরে তাদের চারণের সময় হ্রাস করা উচিত। আপনি যদি নতুন পরিবেশে অভ্যস্ত হন, তবে খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে আর কোনও সমস্যা হবে না।
ছাগল পালন অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে: এই পদ্ধতিতে ছাগল পালন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তারা খামারে সীমাবদ্ধ থাকাকালীন তাদের দানাদার খাবার সরবরাহ করা হয়। তারা মাঠে চারণ করে সবুজ ঘাসে চরে থাকে। বর্ষার সময় মাঠে নেয়া সম্ভব না হলে সবুজ ঘাসও আবদ্ধ অবস্থায় সরবরাহ করতে হবে।
ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনা
ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনাই হচ্ছে অন্যতম প্রধান বিষয়। ছাগল সবুজ ঘাস ও দানাদার খাদ্য খেয়ে জীবন ধারণ করে।তাছাড়া চিকন ধানের খড় খুব ছোট করে কেটে চিটাগুড় মিশিয়েও ছাগলকে খাওয়ানো যায়। খাদ্য ব্যবস্থাপনার প্রথমেই ছাগল ছানার কথা ভাবতে হবে। ছাগল ছানা ২-৩ মাসের মধ্যে মায়ের দুধ ছাড়ে। বাচ্চার বয়স ১ মাস পার হলে উন্নত মানের কচি সবুজ ঘাস ও দানাদার খাদ্যের অভ্যাস করাতে হবে।
সবুজ ঘাস: ছাগলের জন্য ইপিল ইপিল, কাঁঠালের পাতা, খেসারী, মাসকলাই, দুর্বা, বাক্সা ইত্যাদি অত্যন্ত পুষ্টিকর ঘাস। দেশীয় ঘাসের প্রাপ্যতা কম হলে নেপিয়ার, প্যারা, জার্মান ঘাসের উন্নত জাতের ছাগল চাষ করা যায়। চাষ করা ঘাস কেটে বা চারণ করে ছাগলকে খাওয়ানো যায়।
দানাদার খাদ্য : ছাগলের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে প্রতিদিনের প্রয়োজন অনুসারে সবুজ ঘাসের সাথে দানাদার খাবার সরবরাহ করতে হবে। গম, ভুট্টা, গমের তুষ, ধানের কুঁচি, বিভিন্ন ডালের ভুষি, খাইল, শুকনো মাছের গুঁড়ো ইত্যাদি দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দানাদার খাদ্যের সাথে খাদ্য লবণ ও ভিটামিন-খনিজ মিশ্রণ যোগ করতে হয়। বয়সভেদে ছাগলকে দৈনিক ১-২ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হয়।
পানি : মানুষের মতো সকল পশুপাখির পানির প্রয়োজন রয়েছে। বয়সভেদে ছাগল দৈনিক ১-২ লিটার পানি পান করে। তাই পানি ছাগলের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে।
ছাগলের রোগ দমনঃ
ছাগল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। তাদের আবাসনগুলিতে হালকা এবং বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। ছাগল সবসময় শুকনো এবং উঁচু স্থান পছন্দ করে। ছাগল যাতে ঠাণ্ডা না হয় সেদিকে যত্ন নেওয়া উচিত। কারণ ঠাণ্ডায় এরা নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। তাই শীতের সময় মেঝেতে ধানের খড় অথবা নাড়া বিছিয়ে দিতে হয়। শীতের সময় ছাগলকে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষার জন্য এদেও ঘরের দেয়ালে প্রয়োজনে চটের বস্তা টেনে দিতে হবে। নিচে ছাগলের রোগের কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো-
১। ভাইরাসজনিত রোগ : পি.পি.আর, নিউমোনিয়া ইত্যাদি
২। ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ : গলাফুলা, ডায়রিয়া ইত্যাদি
৩। পরজীবীজনিত রোগ : ছাগলের দেহের ভিতরে ও বাইরে দুধরনের পরজীবী দেখা যায়। দেহের বাইরে চামড়ার মধ্যে উঁকুন, আটালি ও মাইট হয়ে থাকে। দেহের ভিতরে গোলকৃমি, ফিতাকৃমি ও পাতাকৃমি দ্বারা ছাগল বেশি আক্রান্ত হয়। এরা ছাগল কর্তৃক খাওয়া পুষ্টিকর খাদ্যে ভাগ বসায়। অনেক কৃমি ছাগলের শরীর থেকে রক্ত চুষে নেয়। তাছাড়া ছাগলের প্রায়ই রক্ত আমাশয় হতে দেখা যায়।