আমাদের কাছে অনেকেই টবে কমলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চায়।তাই আমারা আজকে এর বিস্তারিত আলোচনা করবো। সবাই মনোযোগ দিয়ে আর্টিকেল টি পড়ুন এবং শেয়ার করে দিন। নাস্তার টেবিলে ফল হিসেবে কমলার বিকল্প নেই। ফলটি ভিটামিন-সি এর অভাব পূরণ করতেও সহায়ক। বাজার থেকে কমলা কেনার পাশাপাশি সুযোগ থাকলে নিজের বাসার ছাদেও উৎপাদনও করা যেতে পারে। টবে বা ড্রামে কমলা চাষ করতে চাইলে সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্যা জানা প্রয়োজন।
এর জন্য সর্বনিম্ন ১৮/১৮ ইঞ্চি সাইজের টপ বা ড্রাম ব্যবহার করতে হবে এর থেকে ছোট আকৃতির টবে কমলার চাড়া রোপণ করা যাবে না। এরকম একটি টবে ধারণকৃত মাটির ওজন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কেজি হতে হবে। ১৮/১৮ ইঞ্চি মাপের একটি টবের মাটি তৈরি এর সময় মাটির সঙ্গে গোবর বা কম্পোস্ট ১০ কেজি, ইউরিয়া সার ১৫০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, এমওপি সার ১০০ গ্রাম, জিংক সালফেট ১০ গ্রাম ও বোরিক এসিড ৫ গ্রাম হারে সার মিশিয়ে নিতে হবে।
সারগুলো মাটির সঙ্গে মিশিয়ে নেয়ার পর ১০ থেকে ১৫ দিন পরে গাছ রোপণ করতে হবে। এছাড়া সারা বছর গাছের বৃদ্ধি সঠিক মাত্রায় রাখতে প্রতি মাসে অন্তত একবার করে এক চা-চামচ পরিমাণ NPK / মিশ্র সার এবং ৫০০ গ্রাম গোবর দুই লিটার পানিতে গুলিয়ে টবের গাছের গোঁড়া থেকে ৬ ইঞ্চি দূরে ঠেলে দিতে হবে। এটি গাছের বৃদ্ধিকে প্রতিনিয়ত ত্বরান্বিত করবে।
কমলা গাছের প্রুনিং বা ডাল ছাঁটাইকরণ:
সঠিক পরিমাণে এবং ভালো ফলন পেতে অবশ্যই গাছ ছাটাই করতে হবে। ফল ধরার পূর্ব পর্যন্ত ধীরে ধীরে গাছটিকে ছেঁটে নির্দিষ্ট আকারে আনতে হবে। গাছ বড় হলে নিচের এক মিটার উচ্চতা পর্যন্ত সব ডাল ছেঁটে দিতে হবে। এছাড়া ছাঁটাইয়ের পর ডালের কাটা অংশে বোর্দো পেস্টের প্রলেপ দিতে হবে। এছাড়া অনেক সময় গাছে একসঙ্গে প্রচুর ফল আসে। এ কারণে ফলের আকৃতি ভালো হয়না। এর জন্য প্রতিটি ফলের গুচ্ছে দুটি করে সুস্থ সবল ফল রেখে বাকিগুলো ছেঁটে দিতে হবে।
কমলা গাছের রোগবালাই ও চিকিৎসা:
মাইনর অরেঞ্জ ট্রি একটি মারাত্মক কীটপতঙ্গ। এর পোকামাকড় গাছের ছোট এবং কচি পাতা আক্রমণ করে এবং খায়। এটি ফলের উপরে জিগজ্যাগ টানেলের মতো দাগ তৈরি করে। প্রথম ক্ষেত্রে, আক্রমণ করা পাতা ছিঁড়ে এবং পোড়াতে হবে। হলুদ ফাঁদ তৈরি করে এই পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব। তবে আক্রমণের পরিমাণ অতিরিক্ত হলে, পাতার ক্ষুদ্র পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে প্রতি লিটার পানিতে কিনালাক্স -২ মিলি স্প্রে করতে হবে। এই পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য প্রতি 15 দিন পরে এই ড্রাগগুলি গাছগুলিতে স্প্রে করা যেতে পারে।
কমলা গাছে ড্যাম্পিং অফ রোগ হলে গাছের গোঁড়া পচে যায়। এটি মূলত বর্ষার সময় দেখা যায়। এ ছাড়া অতিরিক্ত পানি সেচ দেয়ার কারণে অনেক সময় এ সমস্যাটি হয়ে থাকে। এটি দূর করতে রেডোমিল্ড গোল্ড ২ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের গোঁড়ায় স্প্রে করতে হয়।
গেমোসিস রোগ হলে গাছের কাণ্ড ও পাতা বাদামি বর্ণ ধারণ করে। গাছের কাণ্ড মাঝ বরাবর ফেটে যায়। সেখান দিয়ে কস বের হতে থাকে। এ রোগটির অতিরিক্ত প্রাদুর্ভাবের ফলে গাছটি উপর থেকে কাণ্ড শুকিয়ে মারা যেতে থাকে। কমলা গাছে গেমোসিস রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত ডালের অংশটি কেটে ফেলে দিতে হবে এবং কাটা অংশে বোর্দো পেস্ট এর মিশ্রণ লাগিয়ে দিতে হবে। বোর্দো পেস্ট তৈরি করার জন্য ১৪০ গ্রাম চুন ও ৭০ গ্রাম তুঁতে আলাদা আলাদা পাত্রে নিয়ে পরবর্তীতে এক লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিন। টবে কমলা চাষের সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্যা মেনে চাষ করতে পারলে ভালো ফলন আশা করা যায়।
ফল সংগ্রহ: কমলা পরিপক্ব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রঙ বদলাতে শুরু করে। ভালোভাবে পাকার পর ফল সংগ্রহ করলে মিষ্টি হয়।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশী শিক্ষা উদ্যোক্তা আয়মান সাদিকের সফলতার গল্প।