টার্কির প্রজনন পদ্ধতি ও নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন
টার্কির প্রজনন পদ্ধতি ও নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন, নিষিক্ত ডিমের অভাবে বাণিজ্যিক টার্কি উৎপাদন বাধা প্রাপ্ত হয়। ডিম ঠিক ভাবে নিষিক্ত না হলে হ্যাচাবিলিটি হ্রাস পায়। খামারিদের একটি সমস্যা হলো নিষিক্ত ডিম উৎপাদন করা। পুরুষ টার্কি স্ত্রী টার্কির তুলনায় ওজন বেশি হওয়ায় মিলনে টার্কির প্রজনন ক্ষমতা বাধাপ্রাপ্ত হয়। পুরুষ টার্কির নখের আঁচড়ে স্ত্রী টার্কির পিঠের চামড়ায় ক্ষত হয়। এতে স্ত্রী টার্কি অসুস্থ হয় এবং ডিমের উৎপাদন কমে যায়। তাই টার্কিকে কৃত্রিম প্রজনন করানো উচিত। পুরুষ টার্কি এবং স্ত্রী টার্কিকে পৃথক ভাবে পালন করা ভাল। পুরুষ টার্কিতে বীর্যের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য পুরুষ টার্কির খাবার আলাদাভাবে প্রস্তুত করতে হয়।
নিষিক্ত ডিম দু’ভাবে হয়ঃ
ক। প্রাকৃতিক
খ। কৃত্রিম প্রজনন
প্রাকৃতিক প্রজননঃ পুরুষ টার্কির নখ কাটা কাটতে হবে। যাতে স্ত্রী টার্কির সাথে মিলনের সময় স্ত্রী টার্কির কোন ক্ষতি না হয়। পুরুষ টার্কির বিশেষ কোন স্ত্রী টার্কির প্রতি একধরনের আসক্তি জন্মে। তাই ফ্লকে প্রতি ১৪ – ১৫ দিন পুরুষ টার্কি পরিবর্তন করা দরকার। ব্রিডারের ক্ষেত্রে ৫ টি স্ত্রী টার্কির জন্য ১ টি পুরুষ দেয়া লাগবে। বড় সাইজের ক্ষেত্রে প্রতি ৩টি স্ত্রী টার্কি জন্য ১ টি পুরুষ ফ্লকে যদি ৪৫ – ৫৫ টি স্ত্রী টার্কি থাকে সেক্ষেত্রে সমান সংখ্যক পুরুষ টার্কি দিতে হবে। স্ত্রী টার্কি একনাগাড়ে ১১ টি পর্যন্ত ডিম দেয়। তারপর কিছু দিন বিরতি দিয়ে পূণরায় ডিম পাড়ে। প্রাকৃতিক ভাবে মিলনের সময় স্ত্রী টার্কির পিঠে পাতলা টাওয়েল সেটিং করা যেতে পারে। এতে স্ত্রী টার্কি পুরুষ টার্কি কর্তৃক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। প্রথম প্রজননে শুক্রাণু স্ত্রী টার্কির প্রজনন তন্ত্রে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকে। তবে পুরুষ টার্কি স্ত্রী টার্কির তুলনায় ওজনে ভারী হওয়ার কারণে মিলনে সমস্যা হয়। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিষিক্ত ডিম পাওয়া সহজ হয় না।
কৃত্রিম প্রজননঃ
বেশি করে নিষিক্ত ডিম পেতে হলে টার্কিকে কৃত্রিম প্রজনন করাতে হবে। আর প্রাকৃতিক ভাবে মিলন করালে ভাল নিষিক্ত ডিম পাওয়া যাবে না।
ক) পুরুষ টার্কি
বীর্য ৩০-৩৭ সপ্তাহ বয়সে সংগ্রহ করা উচিত। বীর্য সংগ্রহের আগে, পুরুষ টার্কি ১৫ দিনের জন্য মহিলা টার্কি থেকে আলাদা রাখতে হবে। বীর্য সংগ্রহের আগে পুরুষ টার্কি নিয়মিত একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি দ্বারা যত্ন নেওয়া উচিত এবং ২ মিনিটের মধ্যে বীর্য সংগ্রহ করতে হবে। টার্কির গড় বীর্য সামগ্রী ০.১৫-০.৩০ মিলি। সংগ্রহের ৬০ মিনিটের মধ্যে বীর্য ব্যবহার করা উচিত। পুরুষ টার্কি খুবই সংবেদনশীল। তাই প্রতিদিন একই ব্যক্তি দিয়ে সিমেন কালেকশন করতে হবে। যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিমেন সংগ্রহ করা যায়। সপ্তাহে ৩ দিন সিমেন কালেকশন করা যায়।
খ) স্ত্রী টার্কি
প্রডাকশন ৮ – ১০% হলে কৃত্রিম প্রজনন করা যাবে। প্রতি ৩ সপ্তাহে একবার স্ত্রী টার্কিকে ০. ০২৫ -০.০৩০মিলি আনডাইলুটেড সিমেন দ্বারা কৃত্রিম প্রজনন করাতে হবে। বিকাল ৫ – ৬টার পরে প্রজনন করাতে হবে । ডিম পাড়া কালীন সময়ের ১২ সপ্তাহ পর প্রতি ১৪ দিন অন্তর প্রজনন করাতে হবে। ১৬ সপ্তাহের বেশি ডিম পাড়া কালীন সময়ে গড় উর্বরতার হার ৮০ – ৮৫ % ।
কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিঃ
বীর্য সংগ্রহ পুরুষ টার্কির পেটে এবং পেছনের অংশে অণ্ডকোষকে মালিশ করে পুরুষ টার্কিকে উদ্দীপিত করে তুলতে হবে। আপনি যদি এক হাত দিয়ে লেজটি তুলেন এবং একই সময়ে মলদ্বারের চারপাশে একই হাতের তর্জনী এবং আঙুলটি ম্যাসেজ করেন তবে বীর্য দুধের মতো বেরিয়ে আসবে। এই সিমেন ছোট আকারের ছোট কাপে সংগ্রহ করতে হবে। গড় সিমেনের পরিমাণ ০.৩৫ -০.৫০ মিলি। প্রতি মিলি আনডাইলুটেড সিমেনের ৬ – ৮ বিলিয়ন শুক্রাণু থাকে।
স্ত্রী টার্কিতে প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
স্ত্রী টার্কির পেটের বাম পাশে পায়ুপথের চারপাশে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। চাপের কারণে ক্লোয়েকা ও ওভিডাক্ট সামনে চলে আসে। পরে সিরিঞ্জ এ সিমেন নিয়ে ১ ইঞ্চি পুশ করতে হবে এবং পায়ুপথ এর চারপাশে হাল্কা ম্যাসাজ করতে হবে। স্ত্রী টার্কিতে ০.০২৫ মিলি সিমেন ১০ – ১২ দিন পর পর দিলে ভাল হয়।
আরও পড়ুনঃ কোয়েল পাখির খামার করবার আগে জেনে নিন কিছু ছোটখাটো বিষয়।