পথশিশু থেকে শিল্পপতি শেখ আকিজ উদ্দিন এর উত্থান, শিল্পপতি শেখ আকিজ উদ্দিন বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক। যিনি ছোট্ট পথশিশু হিসাবে তাঁর জীবন শুরু করেছিলেন। তাঁর ভাষ্য অনুসারে ১৯৪৪ সালে বাবার কাছ থেকে মাত্র ১৮ টাকা নিয়ে তিনি বাড়ি ত্যাগ করেন। তাঁর গন্তব্য ছিলো কলকাতা। তিনি কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি সারাদিন কাজের সন্ধান করতেন এবং রাতে স্টেশনে কাগজে শুয়ে থাকতেন। সারাদিন তার খাবার জন্য ছয় পয়সা লাগতো তবে বেশি খরচ করার মতো টাকা তাঁর ছিল না।
কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন কারণ অর্থ দ্রুত ফুরিয়ে আসছিল তবে তিনি এখনও উপযুক্ত কোনও চাকরি খুঁজে পাননি। এরই মধ্যে তিনি রেলস্টেশনের কাছে স্থানীয় এক হোটেলের মালিকের সাথে দেখা করলেন। ভদ্রলোক তাকে তার হোটেলের একপাশে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তিনি চাকরীর আশা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায়ের কথা ভাবতে শুরু করলেন কিন্তু ব্যবসা শুরু করার মতো পর্যাপ্ত পুঁজি তাঁর কাছে ছিল না। অনেক চিন্তাভাবনার পরে তিনি কমলা বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। তিনি স্বল্প লাভের সাথে কম দামে কমলা ও লেবু কিনে হাওড়া ব্রিজের নিকটে ফেরি দিয়ে বিক্রি করেছিলেন। তবে তাকে এর জন্য পুলিশকে দুই টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিল।
এরই মধ্যে তিনি আরও একটি ব্যবসা খুঁজে পেল যা হলো একটি মুদি দোকানে। এই ব্যবসায়ের জন্য তাকে হিন্দি শিখতে হয়েছিল এবং অল্প সময়ে তিনি হিন্দি ভাষায় আয়ত্ত করতে পেরেছিলেন যাতে তাঁর ব্যবসা হিমশীতল হয়ে পড়েছিল। তবে আরও একটি বিপদ ঘটেছিল এবং একদিন পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। তাকে তিন দিনের জেল ও জরিমানা করা হয়েছিল।
তিনি জেল থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। কিছুদিনের মধ্যেই তার বাবা-মা দু’জনেরই মৃত্যু হয়। তখন তিনি কেবল ১৯ বছর বয়সি যুবক। তিনি এবার নিজের এলাকায় যা কিছু করতে পারেন তা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তবে তিনি কী করবেন তা ভাবতে পারেননি। তিনি সেই সময় বিখ্যাত বিভূভূষণের ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করেছিলেন। সেই সময়ই একটা ব্যাবসার ধারণামাথায় আসে। তিনি প্রথম বিড়ি ব্যবসা শুরু করেছিলেন ১৯৫২ সালে। তিনি ছাড়াও আরও দু’জন কর্মচারীর সাথে কাজ শুরু করেছিলেন এবং কিছুদিনেই বেশ লাভের সন্ধান পেয়েছিলেন। তিনি বেজারডাঙ্গা এলাকায় রেলস্টেশনের পাশেই একটি মুদি দোকান গড়ে তোলেন। তাঁর ভাষ্য অনুসারে ১৯৫৪ সালে তাঁর মোট বিনিয়োগ দাঁড়ায় ৪,০০০ রুপি। হঠাৎ এক রাতে তাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয় এবং তার জীবন সঞ্চয়টি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তিনি আবারও ফকির হয়ে গেলেন কিন্তু তিনি আবারও বিশ্বাস করতে শুরু করলেন যে তিনি মনোবল হারেননি।
তিনি পরিচিতদের সহায়তায় নতুন দোকানটি পুনরায় প্রতিষ্ঠা করেন। কিছু দিনের মধ্যেই সে আবার কয়েক লক্ষ টাকার মালিক হয়ে গেল। তারপরে তিনি ধান, পাট, চাল, ডাল ইত্যাদি বিক্রি শুরু করলেন। ব্যবসার মূলধন হলো বিনা দ্বিধায় মানুষকে বিশ্বাস করা। সত্তরের দশকে তিনি যশোরের সীমান্তের নাভরান বাজারে চলে আসেন। এই সময়ে তিনি একজন বিশিষ্ট স্থানীয় ব্যবসায়ী বিশ্বাসের সহায়তায় ছিলেন এবং তিনি তার বিড়ি ব্যবসায় প্রসারিত করেছিলেন। আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তারপরে একে একে আকিজ টোব্যাকো কারখানা, আকিজ নবীগেশ, আকিজ জুট মিল, আকিজ ম্যাচ ফ্যাক্টর, আকিজ সিমেন্ট কারখানা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত করেন। এছাড়াও তিনি কয়েকটি সমাজসেবা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০,০০০ কর্মচারী কাজ করছেন।
শৈশবে তিনি দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অসহায়ত্ব প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাই তিনি সর্বদা এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেন। এটা সত্য তাঁর কোনও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না তবে তার কঠোর পরিশ্রম এবং সততা তাকে আজ যেখানে নিয়ে এসেছিল তা বলার বাহুল্য রাখে না।
আরও পড়ুনঃ চীনের সবচেয়ে সফল ব্যক্তি এবং ধনীতম ব্যক্তি জ্যাক মা এর সাফল্যের গল্প